আনোয়ার হোসেন:
শহর থেকে গ্রামে এসে নানার বাড়ির পুকুরে মাছ ধরার আনন্দটাই অন্যরকম দেশি মাছ বলে কথা। মাছে ভাতে বাঙালি এই কথাটি এখন শুধু মাত্র বই পুস্তকেই সীমাবদ্ধ। বাস্তব চিত্র পুরোটা ভিন্ন।
নদ-নদীর পানি বাড়লেও ফরিদপুরের ভাঙ্গায় উপজেলায় তেমন একটা দেখা নেই দেশীয় মাছের। তাই চাষের মাছের ওপর নির্ভর করে আমিষের ঘাটতি মেটাতে হচ্ছে।
পুকুরে মাছ ধরতে সবারই খুব বেশি ভালো লাগে। আসলে মাছ ধরতে ভালো লাগে না এমন মানুষ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যায় না। গ্রামাঞ্চলে যারা বসবাস করে তারা প্রায় সময়ে খাল, বিল, পুকুর, জলাশয়ে মাছ ধরে থাকে। শহরে যারা থাকে তাদের মাছ ধরার সুযোগ হয় না। মাছ ধরার ইচ্ছা থাকলে ব্যস্ততার কারণে অনেকের মাছ ধরাতে পারে না। মাছ ধরার দৃশ্য উপভোগ করার আনন্দটাই অন্যরকম হয়ে থাকে। মাছ ধরার দৃশ্য দেখতে নিজের কাছে খুবই ভালো লাগে। নানা বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি পুকুর রয়েছে। কয়েক বছর আগে জমিন কেটে পুকুর তৈরি করা হয়েছে। ৭বছর আগে পুকুরে বেড় জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়েছে। গ্রামের পুকুরে মাছ ধরতে আমার কাছে খুব ভালো লাগে। সত্যি কথা বলতে আমার মাছ খাওয়ার চেয়ে মাছ ধরতে আনন্দ অনেক বেশি হয়ে থাকে। মাছ ধরার অনুভূতি সত্যি বলে বুঝানো যাবে না। তাই হঠাৎ করে মাছ ধরা সিদ্ধান্ত নিলাম সকলে মিলে কিভাবে পুকুর থেকে মাছ ধরা যায়। পুকুরে মেশিন দিয়ে পানি ছেপে মাছ ধরা হবে এই ভেবে মনের মাঝে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করতেছে। সকাল ১০টায় আমরা ৪/৫ জন মিলে। নানার পুকুরে মেশিন দিয়ে পানি ছাপতে শুরু করলাম। কিন্তু কেউ বলে ১দিন মেশিন চললে মাছ ধরা যাবে। কেউ বলে ২দিন চাললে হবে কিন্তু পানি আর কমছে না। এদিকে ঢাকা যাওয়ার সময়ও হয়েছে, এক ফুটের মত পানি আছে, মাছেরা আনাগোনা করছে, দেখে খুবই ভালো লাগছে ,
কিন্তু মাছ দেখে মন মানছিল না তাই ওই পানির ভিতরে নেমে পড়লাম মাছ ধরার জন্য, মাছ ধরা শুরু করলাম কিন্তু পুকুরের মাজে যাই ততোই মাটির নিচে গেড়ে যাই। সকলে মিলে যখন মাছ ধরি কি যে মজা লাগছিল। আমার সাথে ছিল আমার মামা মজিবর মাতুবর, আমার বোন জামাই রেজাউল, মামাতো ভাই জামাল, মামাতো ভাই মহিদুল, ভাইস্তা সামিউল, ও ভাইগ্না ওহী আরো অনেকেই ছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় আগের মত সেই মাছ আর নেই। তিন চার দিন পরিশ্রম করার পরে ১০টা কৈ, একটা শৈল টাকি ধরেছি মাছের সংখ্যা কম হলেও আনন্দটা অনেক হয়েছিল।
ভাঙ্গা উপজেলার ওপর দিয়ে কুমার নদী, সংযোগ রয়েছে আড়িয়াল খাঁ ও পদ্মা নদী।
বড় নদী গুলোতে সারা বছরই পানি থাকে তবে ছোট নদী গুলোর মূল অংশে পানি প্রবাহ থাকলেও শাখা খাল গুলো থাকে পানি শূন্য।
বিভিন্নস্থানে অবৈধভাবে নদী দখল ও অপরিকল্পিত বাঁধের ফলে নদী হারাচ্ছে তার চির-চেনা যৌবন। মাছ ধরতে বিভিন্ন ফাঁদের অপব্যবহার কারণে নদীতে দেশীয় মাছের উৎপাদন দিনকে দিন কমে আসছে।
জানা যায়, জেলায় এক সময় পদ্মা, যমুনা, ধলেশ্বরী, কালিগঙ্গা, ইছামতি, গাজীখালী, কান্তাবতী, নুরুনিগঙ্গা ছিল প্রবহমান নদী। সারা বছর এই সব নদ-নদীতে পানি থাকতো এবং প্রচুর পরিমাণে দেশীয় মাছের দেখা মিলতো। গ্রাম-বাংলার দেশীয় মাছের তালিকায় থাকতো মাগুর, শিং, পাবদা, টেংরা, পুঁটি, মলা, ঢেলা, চেলা, শোল, বোয়াল, আইড়, ভ্যাদা, বাইম, খলিশা, ফলি, চিংড়ি, গজার, বেদা, চেং, টাকি, চিতল, পোয়া, বালিয়া, গুতম, গজারসহ প্রায় ৫০টিরও বেশি বিভিন্ন ধরনের মাছ। কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন তা শুধু মুরুব্বীদের মুখে শুনা যায়।
তবে বাস্তব চিত্র ভিন্নতর প্রাকৃতিক বিপর্যয়, অবৈধ কারেন্ট জাল ও প্রচুর পরিমাণে কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে খাল, বিল, পুকুর, ডোবাগুলোতে দেশীয় মাছের বিলুপ্ত হয়েছে। অপরদিকে গ্রাম্য অঞ্চল গুলোতে খাল-বিল, পুকুর ডোবার গভীরতা যেমন কমে আসছে ঠিক একইভাবে ভরাটের কারণে দেশীয় মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে। এখন বাঙালিদের আমিষের চাহিদা মেটাতে বিদেশি মাছের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
ভাঙ্গা উপজেলার দেওড়া এলাকার আতিয়ার মাতবর (৪৫) বলেন, আমরা দেখেছি সারা বছর নদীতে পানি এবং প্রচুর পরিমাণে দেশীয় মাছের দেখা মিলতো। বেশ কয়েক বছর যাবত হাটে বাজারে দেশীয় মাছ মানে সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। নদীতে পানি থাকলে হয়ত দেশীয় মাছের দেখা মিলতো। তবে অপরিল্পিতভাবে নদী ভরাট ও নাব্যতা নষ্টের কারণে হারাতে বসেছে দেশীয় প্রজাতির মাছ।
বাড়ির পাশ দিয়েই বয়ে গেছে কুমার নদী তবে এখন আর আগের সেই নদীটি নেই। ছোট বেলায় বেশ কয়েকজন মিলে আমরা নদীতে মাছ ধরতাম। এখন আর সেই চিত্র দেখা যায় না। নদী থেকে মাছ গুলো খালবিলে যাবে সেই অবস্থা নাই কারণ অবৈধ মাছ ধরার ফাঁদের কারণে দেশীয় মাছের সংখ্যা দিনদিন কমে আসছে। নদীর নাব্যতা ও এই অবৈধ ফাঁদের অপব্যবহার বন্ধ হলে পুনরায় দেশীয় মাছ তাদের প্রজনন বাড়াতে পারবে। মানবদেহের আমিষে ঘাটতি মেটাতে অনেকেই এখন বিদেশি মাছের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।